প্রতিবেদকঃ বাঁশ খালী প্রতিনিধি
মোঃআমিন উল্লাহ
আণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য, খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, শিল্পসহ জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন খাতকে সহায়তা করার কথা ভেবে ৩ মার্চ ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু এই বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১৫-এর মাধ্যমে মূল দায়িত্বসমূহ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
শুরু থেকে বঙ্গবন্ধু এই প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার অধীনে পরমাণু শক্তির অপব্যবহার নিরোধে কাজ করার নির্দেশ দেন। এই কমিশনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পরমাণু চিকিৎসা সেবাপ্রদান, আমদানিকৃত সকল খাদ্যদ্রব্যের তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষণ, বিকিরণজনিত নিরাপত্তাচর্চা প্রতিষ্ঠা, পারমাণবিক রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধ জীবাণুমুক্তকরণ, খাদ্য সংরক্ষণ, উন্নতমানের পলিমারসামগ্রী উদ্ভাবন, খাদ্য ও পরিবেশের নানা উপাদানের রাসায়নিক বিশ্লেষণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার উন্নয়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৬ নভেম্বর, ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিপরিষদের এক আদেশবলে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) গঠন করা হয়। শুরুতেই ঢাকায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আঞ্চলিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি দেখে ভবিষ্যতের খাদ্যচাহিদার কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা ভাবেন। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৩২-এর বলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) গড়ে তোলা হয়। এই প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ রেখে কৃষিবিষয়ক ইনস্টিটিউট এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের মাধ্যমে কৃষিসংক্রান্ত গবেষণা, পরিকল্পনা পরিচালনা, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন পরিচালনা করে যাচ্ছে।
জাতীয় উন্নতিতে দেশের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একাডেমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও ফলিত বিষয়াবলিতে গবেষণা, গবেষণালদ্ধ ফল বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ, সাধারণে বিজ্ঞানের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া, বিজ্ঞানবিষয়ক নানা প্রকাশনা, কর্মশালা ও আলোচনা আয়োজন করা ইত্যাদির মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রসার ঘটানোর কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ নির্মাণ (পৃষ্ঠা- ৫৯, ৬০)